পাঁচ ঘণ্টার আন্দোলনের পর শাকসু নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করলেন উপাচার্য
পাঁচ ঘণ্টার টানটান আন্দোলনের পর শাকসু নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা — ঘটনার বিস্তারিত আলোচনা
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পাঁচ ঘণ্টা ধরে উত্তপ্ত পরিস্থিতির পর অবশেষে শাকসু (শিক্ষার্থী সংসদ) নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করতে বাধ্য হন উপাচার্য। পুরো ঘটনার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, তা শিক্ষার্থী আন্দোলনের সাম্প্রতিক ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য এক অধ্যায় হয়ে উঠেছে।
📌 আন্দোলনের সূচনা: কেন শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হলো?
সকালে হঠাৎ করেই শিক্ষার্থীরা ক্লাস–পরীক্ষা বর্জন করে প্রধান প্রশাসনিক ভবনের সামনে জড়ো হতে শুরু করেন।
তাদের মূল অভিযোগ ছিল—
-
শাকসু নির্বাচন নিয়ে প্রশাসনের দীর্ঘদিনের “অস্পষ্টতা”
-
বারবার আশ্বাস দিলেও কোনো নির্দিষ্ট তারিখ না দেওয়া
-
ছাত্রকল্যাণ, বাস, আবাসন, নিরাপত্তা—এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে নির্বাচিত ছাত্র নেতৃত্বের প্রয়োজনীয়তা
শিক্ষার্থীদের ভাষায়,
“শিক্ষার্থী সংসদ ছাড়া ক্যাম্পাসে কোনো গণতান্ত্রিক কাঠামো নেই। প্রশাসন শুধু প্রতিশ্রুতি দিয়ে সময় কাটাচ্ছে।”
📌 পাঁচ ঘণ্টার টানাপোড়েন: আলোচনা ব্যর্থ, উত্তেজনা বাড়ে
সকাল ১০টা থেকে শুরু হওয়া আন্দোলন ঘণ্টা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে আরও জোরালো রূপ নেয়।
এই সময়কালে—
-
দুইবার প্রশাসনের প্রতিনিধি এসে আলোচনা করেন
-
কিন্তু শিক্ষার্থীরা ‘সময় নির্দিষ্ট’ ঘোষণা ছাড়া অন্য কিছু শুনতে রাজি ছিলেন না
-
লাইব্রেরি, বিভাগীয় ভবন ও বিভিন্ন ফ্যাকাল্টিতে স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হয়
-
নারী শিক্ষার্থীদেরও বড় একটি অংশ আন্দোলনে যুক্ত হয়
দুপুরের পর আন্দোলন আরও তীব্র হয়। স্লোগান, অবস্থান কর্মসূচি, হাতের প্ল্যাকার্ড—সব মিলিয়ে ক্যাম্পাস কার্যত থমথমে হয়ে পড়ে।
📌 উপাচার্যের আগমন: পরিস্থিতি শান্ত করতে মাঠে প্রশাসন
বিকেলের দিকে উপাচার্য নিজেই আন্দোলনস্থলে আসেন।
তার আগমনের পর—
-
প্রায় ৪৫ মিনিট শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা হয়
-
শিক্ষার্থীরা স্পষ্ট করে বলেন, “তারিখ ছাড়া কিছুই গ্রহণযোগ্য নয়”
-
উপাচার্য প্রথমে সময় চাইলেও পরে চাপের মুখে নির্বাচন আয়োজনের সম্ভাব্য দিন ঘোষণা করেন
তারিখ ঘোষণা হওয়া মাত্র শিক্ষার্থীদের মাঝে স্বস্তির বাতাস বয়ে যায়। আন্দোলনকারীরা ধীরে ধীরে অবস্থান কর্মসূচি স্থগিত করতে শুরু করেন।
📌 শিক্ষার্থীদের প্রতিক্রিয়া: “তারিখ দিলেই সব শেষ নয়”
যদিও তারিখ ঘোষণা হয়েছে, শিক্ষার্থীরা সতর্ক অবস্থান নিয়েছেন।
তাদের বক্তব্য—
“নির্বাচন সময়মতো না হলে আমরা আবার আন্দোলনে ফিরব। এবার আর কোনো অজুহাত চলবে না।”
অনেকেই বলছেন, এই আন্দোলন দেখিয়ে দিল—
-
শিক্ষার্থীদের দাবি উপেক্ষা করা যায় না
-
ছাত্ররাজনীতি নিষ্ক্রিয় থাকলে প্রশাসনিক অদক্ষতা বাড়ে
-
গণতান্ত্রিক প্ল্যাটফর্ম পুনর্গঠনের সময় এসেছে
📌 প্রশাসনের অবস্থান: নতুন অধ্যায়ের সূচনা?
উপাচার্য বলেছেন—
-
নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে আয়োজনের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে
-
প্রক্রিয়াগত কারণে কিছু দেরি হয়েছিল
-
তবে এবার আর বিলম্ব হবে না
প্রশাসন নির্বাচন পরিচালনার জন্য আলাদা কমিটি গঠনের কথাও জানিয়েছে।
📌 বিশ্লেষকদের মত: কেন এই নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ?
বিশ্লেষকরা মনে করেন—
-
শাকসু নির্বাচন দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় ক্যাম্পাসে প্রতিনিধিত্বহীনতা তৈরি হয়েছিল
-
শিক্ষার্থীদের দাবি তালিকা বিবেচনায় নেওয়ার জন্য নির্বাচিত নেতৃত্ব প্রয়োজন
-
একাডেমিক, আবাসন, নিরাপত্তা ও পরিবেশগত ইস্যুতে ছাত্রদের কথা শোনার উপযুক্ত প্ল্যাটফর্ম এটি
এছাড়া অনেকেই বলছেন, এই আন্দোলন ভবিষ্যতে ক্যাম্পাস রাজনীতিকে নতুনভাবে সংগঠিত করবে।
📌 উপসংহার
পাঁচ ঘণ্টার টানটান চাপ, আলোচনা, স্লোগান আর অস্থিরতার পর অবশেষে শিক্ষার্থীদের দাবির জবাবে শাকসু নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
যদিও আন্দোলন আপাতত স্থগিত, সকলের নজর এখন একটি প্রশ্নে—
নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন কি সত্যিই অনুষ্ঠিত হবে, নাকি আবারও নতুন নাটক শুরু হবে?


No comments