ডাকসু নেতৃত্বের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের প্রতিবাদ
ডাকসু নেতৃত্বের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের অভিযোগ ও প্রতিবাদ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও ডাকসু নেতৃত্বের বিরুদ্ধে অনিয়ম, চাঁদাবাজি ও ফ্যাসিবাদী আচরণের অভিযোগ তুলেছে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট। মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) এক লিখিত বিবৃতিতে সংগঠনটি সাম্প্রতিক উচ্ছেদ অভিযান ও ডাকসুর ভূমিকা নিয়ে তীব্র সমালোচনা করে।
জোটের নেতারা বলেন, অতীতে প্রশাসন উচ্ছেদ অভিযান চালালেও পরে একই দোকানগুলো প্রশাসনের মদদেই আবার বসতে পেরেছে। প্রক্টোরিয়াল টিমের কিছু সদস্য এসব দোকান থেকে চাঁদা আদায় করলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
তারা অভিযোগ করেন, সাম্প্রতিক অভিযানে হকারদের ওপর হামলার প্রতিবাদ জানানো বামপন্থি শিক্ষার্থীদের ‘উসকানিদাতা’ আখ্যা দিয়ে ডাকসু নেতৃত্ব ফ্যাসিবাদী আচরণ করেছে। তাদের ভাষায়, “প্রতিবাদী শিক্ষার্থীদের শোকজ করার আহ্বান ন্যক্কারজনক ও কর্তৃত্ববাদী মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ।”
জোটের দাবি, ডাকসুর সমাজসেবা সম্পাদক এবি জুবায়ের ও সদস্য সর্ব মিত্র চাকমা নিজেদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ ঢাকতে সমালোচনাকারীদের ওপর অনলাইন-বট আক্রমণ ও মিথ্যা প্রচারণা চালাচ্ছেন। তারা বলেন, বামপন্থী শিক্ষার্থীদের ‘মাদক সিন্ডিকেট’ বলে অপপ্রচার করা মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর সরাসরি হস্তক্ষেপ।
সংগঠনটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, সম্প্রতি উচ্ছেদ হওয়া দোকানগুলো মূলত চা, ফাস্টফুড, ফুল ও অলংকারের দোকান ছিল—মাদক ব্যবসার সঙ্গে তাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। কর্মসংস্থান নিশ্চিত না করে উচ্ছেদ করা সমস্যার সমাধান নয়, বরং তা আরও জটিল করছে বলে মন্তব্য করে জোট।
বিবৃতিতে বলা হয়, ঢাকা শহরে বিনোদন কেন্দ্রের অভাব ও রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতার কারণে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় অতিরিক্ত ভিড় তৈরি হয়েছে। সাম্প্রতিক হত্যাকাণ্ডের উদাহরণ টেনে তারা বলেন, প্রশাসনের ব্যর্থতায় ক্যাম্পাস এখন অনিরাপদ।
নারীর নিরাপত্তা প্রসঙ্গে জোট জানায়, প্রশাসনের দায়িত্বহীনতা ও যৌন নিপীড়নবিরোধী কমিটির অনুপস্থিতি নারীর নিরাপত্তাহীনতার বড় কারণ। “নারী হয়রানি ঠেকানোর নামে নারী দোকানদারদের উচ্ছেদ প্রকৃত সমাধান নয়,” উল্লেখ করে তারা ক্যাম্পাসে ‘নিরাপদ ক্যাম্পাস চার্টার’ প্রণয়নের দাবি জানায়।
তাদের বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “আমরা শিক্ষার্থীরা বিশ্বাস করি, হকার ও উদ্বাস্তু সংকট রাষ্ট্রীয় সমস্যা। গ্রামীণ অর্থনীতির পতন ও বেকারত্বের কারণে অনেকে জীবিকার সন্ধানে শহরে এসে ছোট ব্যবসা শুরু করছে—তাদের নিরাপদ উদ্যোক্তা হিসেবে টিকিয়ে রাখার দায়িত্ব রাষ্ট্রের।”
সংগঠনটি দাবি করে, উচ্ছেদ অভিযানে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত, ক্ষতিপূরণ প্রদান এবং বাজেয়াপ্ত মালামাল ফেরত দিতে হবে। তারা অভিযোগ করেন, শাহবাগে এক রিকশাচালককে মারধর ও শিক্ষার্থী আবির হাসানের ফোন তল্লাশি করে প্রক্টোরিয়াল টিম ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘন করেছে, যা “বেআইনি ও ফ্যাসিবাদী আচরণ।”
গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট তাদের বিবৃতিতে পাঁচটি দাবি তুলে ধরে—
১. হামলা ও হয়রানির ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার, ক্ষতিপূরণ এবং মালামাল ফেরত দেওয়া।
২. ভ্রাম্যমাণ জনগোষ্ঠীর বিকল্প কর্মসংস্থান ও পুনর্বাসন নিশ্চিত করা।
৩. মাদক সিন্ডিকেট ও চাঁদাবাজি তদন্ত করে দায়ীদের শাস্তি।
৪. মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষা ও মিথ্যা প্রচারণা বন্ধ করা।
৫. নিরাপদ, শিক্ষার্থীবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিতে ‘নিরাপদ ক্যাম্পাস চার্টার’ প্রণয়ন করা।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “ডাকসু সদস্যদের এই ধরনের মিথ্যাচার ও ফ্যাসিবাদী কর্মকাণ্ড শিক্ষার্থীরা চিহ্নিত করবে ও প্রত্যাখ্যান করবে।”

No comments